স্বদেশ ডেস্ক:
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ বাবদ প্রায় ১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা প্রণোদনা দিয়েছিল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ১৮ জেলার ১৮ হাজার কৃষককে (প্রতি জনকে ১ বিঘা) এই প্রণোদনা দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, প্রণোদনার এই বীজ ও সারে খরিপ-২ তথা গ্রীষ্মকালীন মওসুমে ৩৬ হাজার ৬০৭ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। গ্রীষ্মকালে উৎপাদন হওয়া এই পেঁয়াজের (৫০ টাকা হিসাবে) বাজারমূল্য প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা। এতে আমদানি নির্ভরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি সাশ্রয় হয়েছে দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা।
বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। চাহিদার বিপরীতে পেঁয়াজের সঙ্কট দূর করা হয় ভারত বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু গ্রীষ্মকাল তথা সেপ্টেম্বর মাস এলেই দাম বাড়তে থাকে পেঁয়াজের। ২০১৯ সালে হঠাৎই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে তা ৩০০ টাকা কেজিতে ঠেকে। তখনই সরকার ভারতনির্ভরতা দূর করার জন্য পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পর্ণ হওয়ার রোডম্যাপ করে। বিশেষ করে নরমাল বা শীতকালীন সিজনের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে মনোযোগী হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (কন্ট্রোল রুম) খন্দকার মু. রাশেদ ইফতেখার জানান, আগে গ্রীষ্মকালে কোনো পেঁয়াজ হতো না। অনেক চেষ্টা করেও আগে সম্ভব হয়নি। গত বছর ভারত থেকে এই বিশেষ জাতটি দেশে আনা হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ার/মাটির সাথে ম্যাচ করেছে। প্রণোদনার মাধ্যমে ১৮ হাজার কৃষককে এক বিঘা করে দুই হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করতে দেয়া হয়েছে। কৃষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষককে প্রশিক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বীজ ক্রয় বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা, সার বাবদ প্রায় ৯৭ লাখ টাকা, চারা উৎপাদন বাবদ ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ১৮ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রণোদনা বাবদ খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন তথা দু’টি খরিপ মওসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়। খরিপ-১ মার্চ থেকে জুন মাস এবং খরিপ-২ হলো জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। খরিপ-১ মওসুমে ৪৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আর খরিপ-২ মওসুমে ২৪০৫ হেক্টর জমিতে প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হয়েছে। সবমিলিয়ে ২৪৫২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৮ জেলার মধ্যে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও ময়মনসিংহ জেলায় প্রণোদনার এই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পরিচালক সদস্য (বীজ ও উদ্যান) মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ খুব ভালো হয়েছে। প্রথম বছরই বিস্ময়কর সফলতা আসে এতে। গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ২৫ লাখ টন থেকে এক লাফে ৩২ লাখ টনে পৌঁছেছে। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় স্থানটিও বাংলাদেশের দখলে চলে এসেছে। আগে ৩০ লাখ টনের কিছুটা বেশি উৎপাদনে এই অবস্থানে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন (২০০ লাখ টন) ও ভারত (৮১ লাখ টনের বেশি)।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজারা বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়েছে। আগামীতেও প্রণোদনা দিয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৮ টন ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ বীজ আনার জন্য বিএডিসিকে কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে সরকার এটা বাড়াবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসে সরকার পেঁয়াজে প্রণোদনা অব্যাহত রাখবে।
বীজ আমদানি ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এটার যাতে কোনো সঙ্কট তৈরি না হয়, সে জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি দেশে পেঁয়াজে দ্রুতই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হবে।